Skip Navigation | Accessibility

information, advice, guidance and learning materials in community languages

মর্মান্তিক আঘাতের পরের মানসিক চাপ
Post Traumatic Stress

নিজেকে নিজে সাহায্য করার পথনির্দেশিকা

দুইজন ব্যক্তি যাদের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার অভিজ্ঞতা হয়েছে, নিম্নলিখিত চিন্তাধারাগুলি হচ্ছে তাদের।

“আমি খুব খারাপ বোধ করি। খুব অস্থির লাগে এবং মেজাজ ও খুব খিটখিটে হয়ে গেছে। আমি কিন্তু এরকম ছিলাম না। ছয় মাস আগে গাড়ীর দুর্ঘটনা বাএক্সিডেন্ট হয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি গাড়ীর ভিতর নিরাপদ বোধ করি না। আমার এত ভয় করে যে যখনই সম্ভব হয় তখনই আমি একদম বাড়ীর বাইরে যাই না। হঠাত্ হঠাত্ সেই দুর্ঘটনার দৃশ্য আমার মনের মধ্যে ওঠে এবং কিছুতেই সেগুলি মন থেকে যেতে চায় না। এমন কি ঘুমের মধ্যেও আমি সেগুলির স্বপ্ন দেখি এবং সেই সপ্নগুলি সাধারন স্বপ্ন নয়, দুঃস্বপ্ন, যেখানে দুর্ঘটনা বার বার ঘটছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমার শরীরে আর শক্তি নাই।”

“জীবনের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গী একদম বদলে গেছে। খালি মনে হয় কেন আমাদের জীবনে এরকম ঘটনা ঘটল? আমার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়, এবং আমার কেবল মনে হয় যে আমি নিশ্চয়ই আরও কিছু করতে পারতাম তাহলে আমার বন্ধু মারা যেত না। আমার মনের মধ্যে এই দুর্ঘটনা বার বার ঘটছে, সব সময় এই চিন্তা যে “যদি আমি এটা করতাম,” “যদি আমি সেটা করতাম”----, আমার মন খুবই খারাপ এবং কখনও কখনও আমি মানসিক চাপে বা ডিপ্রেশনে ভুগি---বিশ্রাম করতে পারি না এবং ভয়ে ভয়ে থাকি, মনে হয় যে আমিও হয়ত মারা যেতে পারতাম---, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে পারি না---, আমার একেবারে হতাশ লাগে।

আপনি যদি মর্মান্তিক দুর্ঘটনাজনিত মানসিক পীড়ায় ভুগে থাকেন, এরকম চিন্তাধারা হয়ত আপনার মনেও উঠতে পারে। যাদের মনের মধ্যে এই ধরনের চিন্তাধারা জাগে, তাদের নিজেদের অবস্থা বুঝবার জন্য মনোবিজ্ঞানীরা

এই তথ্যপত্রটি লিখেছেন এবং এই সঙ্গে কতকগুলি ব্যবহারিক এবং কার্যকরী প্ন্থারও নির্দেশ দিয়েছেন যেগুলি আপনার দৈনন্দিন জীবন চালাতে সাহায্য করবে।

মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমা কাকে বলে?

যে কোন ঘটনা, যেটা প্রতিদিনের সাধারন ঘটনার বাইরে, সেটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হতে পারে এবং এই ঘটনা যে কোন একজন ব্যক্তির পক্ষে মর্মান্তিক মানসিক চাপের কারন হতে পারে।

অনেকভাবেই এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। কোথাও আগুন লাগার ফলে, কোন দুর্ঘটনার ফলে, চুরি বা ডাকাতির ফলে, কেউ আক্রমন করলে, কোন কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়লে বা সেই অবস্থা দেখলে, যেমন-কেউ মারা গেলে ইত্যাদি। এই দুর্ঘটনা খুব বড় ধরনের হতে পারে, যার মধ্যে অনেক মানুষ যুক্ত থাকতে পারেন অথবা এটা খুবই ব্যক্তিগত ঘটনা হতে পারে। যার মধ্যে কেবলমাত্র আপনি, আপনার বন্ধু-বান্ধবরা অথবা আপনার পরিবারের সদস্যরা এর মধ্যে যুক্ত থাকতে পারেন।

মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর মানুষরা কিভাবে ব্যবহার করেন?

মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর আপনার নিম্নলিখিতগুলি অভিজ্ঞতাগুলি হতে পারে সাধারনত: এই প্রতিক্রিয়াগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়;

  • এই দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা বার বার আপনার মনে উঠবে
  • যে সকল জিনিষ দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেগুলিকে এড়িয়ে চলা।
  • মানসিক চাপের মধ্যে থাকবেন এবং খিটখিটে মেজাজ হবে অথবা খুব বেশী সতর্ক হবেন।
  • মন খারাপ লাগবে এবং কাঁদবেন।

আপনি উপরোক্ত অবস্থাগুলি বোধ করছেন কি না, সেটা লক্ষ্য করে দেখলে, সেটা হয়ত আপনার পক্ষে সাহায্যকারী হতে পারে।

মনের ভিতর এই দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা বারে বারে হতে থাকবে

  • দুর্ঘটনার ছবিগুলি, যেগুলি আপনি মনে করতে চান না; সেগুলি মনে আসবে। (প্রায়শই সেগুলিকে বলা হয় ফ্ল্যাশব্যাক)
  • মর্মান্তিক আঘাতের ঘটনা বা অন্যান্য ঘটনা যেগুলি আপনি মনে করতে চান না, সেগুলি সম্বন্ধে স্বপ্ন দেখা।
  • মনে হয় এই দুর্ঘটনা আবার ঘটছে মনে হচ্ছে আপনি আবার এই ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
  • যে কোন অবস্থা আপনাকে কঠিন আঘাত বা ট্রমার কথা মনে করিয়ে দেয়, সেই অবস্থায় পড়লে আপনি মানসিক চাপ বা ডিপ্রেশন বোধ করেন।
  • যে অবস্থাগুলি আপনাকে মর্মান্তিক আঘাত বা দুর্ঘটার কথা মনে করিয়ে দেয়, সেই অবস্থায় পড়লে আপনি শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করেন যেমন: হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা ইত্যাদি।

মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার ফলে যে অনুভুতিগুলি আপনার মনে জাগে এবং মনকে অসাড় করে ফেলে, সেগুলিকে কি ভাবে এড়ানো হয়

  • এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার ব্যাপারে চিন্তা, অনুভুতি এবং কথাবার্তা এড়িয়ে চলা
  • যে সকল কাজকর্ম, স্থান অথবা লোকজন আপনাকে সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার কথা মনে করিয়ে দেয়, সেগুলি এড়িয়ে চলা।
  • মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার সময় কি হয়েছিল সেটা মনে করার অক্ষমতা।
  • জীবনের প্রতি মমতা হারিয়ে ফেলা। অন্যদের থেকে দূরে সরে যাওয়া অথবা আপনি সাধারনভাবে যে রকম বোধ করেন, সেরকম বোধ না করা
  • মনে হয় না যে আপনার ভবিষ্যত্ অন্য পাঁচজনের মত স্বাভাবিক হবে, আপনার হয়ত মনে হতে পারে যে আপনি ধার করা সময়ের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন।

অন্য সময়ের থেকে আরও বেশী চাপ এবং খিটখিটে বোধ করছেন

  • রাগী অথবা খিটখিটে বোধ করা
  • মনযোগ করতে না পারা বা মনোযোগে অক্ষমতা
  • ঘুম আসতে অসুবিধা হওয়া
  • সর্বদা সতর্ক থাকা এবং সহজেই চমকে যাওয়া।

মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার মানসিক চাপ আমাদের উপর চার ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে:

  • আমরা কি রকম বোধ করি।
  • আমরা কিভাবে চিন্তা করি।
  • আমাদের শরীরের অবস্থা কি রকম বা কিভাবে আমাদের শরীর চলে
  • আমাদের ব্যবহার কিরকম।

নীচে যে লক্ষনগুলি বর্ননা করা হয়েছে, সেই তালিকায় যেগুলি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এবং তাহলে সেগুলিতে দাগ বা টিক দিলে আপনি কি রকম বোধ করছেন, সে ব্যাপারে সাহায্য হতে পারে।

আপনি কিরকম বোধ করছেন?

  • উদ্বিগ্ন, সহজে ঘাবড়ে যাচ্ছেন, চিন্তিত, ভীত
  • মনে হচ্ছে একটা সাংঘাতিক কিছু হবে।
  • কঠিন চাপের মধ্যে আছেন, মনের ভিতর কি হচ্ছে সেটা প্রকাশ করতে পারছেন না, মনে হচ্ছে সহ্য ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌছে গেছেন, অস্থির বোধ করছেন
  • অস্বাভাবিক, নিজেকে নিজে বুঝতে পারেন না, হতবুদ্ধি বিচ্ছিন্ন
  • মন খারাপ বা ডিপ্রেশনে ভুগছে

আপনার শারীরিক প্রতিক্রিয়া?

হ্যদয়ের দ্রুত চলন এবং বুকের ভিতর ধক ধক করা

  • বুকে আটসাট বা টাইট বোধ করা
  • পেশীতে চাপ পড়া বা শক্ত হয়ে যাওয়া
  • ক্লান্ত এবং অবসন্ন বোধ করা
  • শরীরে ব্যথা
  • মাথা ঘোরা, মনে হয় পড়ে যাবেন
  • আতঙ্কিত হওয়া
  • মন খারাপ বা ডিপ্রেশনে ভোগা, মনে হয় সবকিছু হারিয়ে গেছে
  • রাগ হওয়া
  • কান্নাকাটি করা

আপনি কিভাবে চিন্তা করেন।?

  • সব সময় দুশ্চিন্তা করা
  • কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা
  • হঠাত্ হঠাত্ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার ছবিগুলি মনের মধ্যে ভেসে উঠে
  • মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার সব কিছুর জন্য বা, কোন কোন অংশের জন্য নিজেকে দায়ী করা
  • মনে হয় আবার এরকম হবে
  • সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা
  • নিজেকে দোষ দেওয়া, লজ্জিত অথবা তিক্ত বোধ করা
  • মনে নানারকমের চিন্তা উঠা
  • ছটফট করা, বিশ্রাম নেওয়ার অক্ষমতা
  • পেট মোচড়ানো
  • ঘুমাতে না পারা এবং দুঃস্বপ্ন দেখা
  • সহজেই চমকে যাওয়া

আপনি কি করেন?

  • পায়চারী করা
  • যে সকল জিনিষ এই দুর্ঘটনার বা ট্রমার কথা মনে করিয়ে দেয় সেগুলি এড়ায়ে চলা।
  • বসতে বা বিশ্রাম করতে পারেন না।
  • লোকজনের সঙ্গ এড়িয়ে চলেন।
  • একলা থাকতে পারেন না।
  • খিটখিটে মেজাজ এবং অন্যদের মুখ ঝামটা দেন।
  • অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলেন।
  • বেশী করে মদ.সিগারেট খান।
  • অন্যদের উপর বেশী নির্ভর করেন।

সাধারন চিন্তাগুলি

“এটা আমার দোষে হয়েছে”

“আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”

“আমার মনে হচ্ছে আমার হার্ট এ়টাক হবে।”

“এই ঘটনা আমাকে নিয়ন্ত্রন করছে।”

“আমি সামলাতে পারছি না।”

“আমি অজ্ঞান হয়ে যাব।”

“এরকম কেন হতে হল গেল?”

“আমার আর কিছুই ভাল লাগে না।”

মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার ব্যাপারে আমাদের প্রতিক্রিয়া এত কঠিন হয় কেন?

অনেকগুলি কারনেই মর্মান্তিক আঘাত বা ট্রমা আমাদের উপর কঠিন প্রভাব ফেলে।

প্রথমত: আমাদের জীবন সম্বন্ধে যে বিশ্বাস ছিল, সে বিশ্বাস ভেঙ্গে যায়। ।সাধারনতঃ আমরা মনে করি যে জীবন হচ্ছে নিশ্চিত এবং নিরাপদ। জীবনের একটা মানে এবং উদ্দেশ্য আছে। এর ফলে হয়ত এ রকম হতে পারে যে জীবন সম্বন্ধে আমাদের যে ধারনা আছে সেটা ভেঙ্গে যায়। আমাদের যদি নিজেদের সম্বন্ধে ধারনা অন্যরকম থাকত তাহলে আমাদের ব্যবহার হয়ত অন্যরকম হত।

দ্বিতীয়ত: মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমা হঠাত্ ঘটে। আগের থেকে এর কোন সঙ্কেত পাওয়া যায় না। নূতন পরিস্থিতিতে মানানোর জন্য সময় পাওয়া যায় না। এটা হচ্ছে আমাদের সাধারন অভিজ্ঞতার বাইরে এবং আমরা জানি না যে এই অবস্থায় কি করতে হবে অথবা কি ভাবে ব্যবহার করতে হবে। আপনার হয়ত: মনে হয়েছিল যে আপনি বাঁচবেন না, এই দুর্ঘটনা ফলে অন্য লোকেরা হয়ত মারা গেছেন এবং আপনি মানসিক আঘাত পেয়েছেন। এই বিপদের ভয়ে আমাদের মন কঠিন আঘাত বা ট্রমার স্মৃতিকে খুব শক্ত করে ধরে রাখে। আমাদের মনের এভাবে ব্যবহার করার কারন হয়ত নিজেকে রক্ষা করার জন্য, যাতে আমাদের আর কখনও এই অবস্থায় না পড়তে হয়। এর ফলে আপনি উপরে বর্নিত মর্মান্তিক দুঘটনার বা ট্রমার পরের মানসিক চাপে ভুগে থাকেন।

আমি কিভাবে নিজেকে এই মর্মান্তিক অবস্থাকে বা ট্রমাকে অতিক্রম করতে সাহায্য করব?

এটা মনে রাখা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য যে আপনার যে প্রতিক্রিয়া গুলি হচ্ছে, সেগুলি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমায় যারা ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে এটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এগুলি কোন দুর্বলতা বা মাথা খারাপ হওয়ার লক্ষন নয়। নীচে কতকগুলি ধারনা দেওয়া হল। এই ধারনাগুলি হয়ত আপনার এই প্রতিক্রিয়াগুলি কিভাবে সামলাতে আরম্ভ করবেন সেই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। সেগুলি হল:

  • মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার মানে বোঝা
  • ঘটনার দৃশ্যগুলি এবং দুঃস্বপ্নগুলিকে সামলানো
  • কঠিন চাপ, খিটখিটে মেজাজ এবং রাগ সামলানো
  • লোকজন এবং সবকিছুকে এড়িয়ে চলা বন্ধ করা
  • মন যাতে খারাপ না হয় সেই চেষ্টা করা

১. মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্র্যমার মানে বোঝা।

বাস্তবে কি ঘটনা ঘটেছিল সেটা জানতে চেষ্টা করুন। এর ফলে আপনার মনে যে দৃশ্যগুলি ভাসে, সেগুলিকে এবং ঘটনাটিকে আরও ভাল করে বুঝতে পারবেন। এটা আপনাকে ভাল হতে সাহায্য করতে পারে।

যদি অন্য কোন ব্যক্তিরা এর মধ্যে যুক্ত থাকেন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং এই ঘটনা সম্বন্ধে তাদের কি মত সেটা জিজ্ঞাসা করুন। অন্যান্য ব্যক্তিরা যারা সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন এই সমস্ত ব্যক্তিরা আপনাকে সেখানে কি ঘটেছিল সে সম্বন্ধে একটা ধারনা দিতে সাহায্য করতে পারেন। বিশেষত: উদ্ধারকারী দলেরা এ ব্যাপারে আপনাকে খুশী মনে সাহায্য করবে।

অন্যদের সঙ্গে এই ঘটনার চিন্তাগুলি নিয়ে আলোচনা করলে আপনার পক্ষে হয়ত সেটা সাহায্যকারী হতে পারে। আপনার হয়ত মনে হতে পারে যে এই মর্মান্তিক ঘটনার ফলে জীবনের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হয়ে গেছে। এটা উল্লেখযোগ্য যে আপনি এই মর্মান্তিক দুঘটনার পরে কেমন বোধ করছেন সেটা ভালভাবে বোঝা এবং এগুলি নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বললে সেটা হয়ত আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

কেউ কেউ বন্ধু, পরিবারের অথবা স্বামী/স্ত্রী/সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করেন, অন্যরা হয়ত ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করেন বা কাউন্সিলারের কাছে যান। অন্যরা দেখছেন যে তাদের অভিজ্ঞতাগুলি যদি তারা লেখেন তাহলে সেটা তাদের পক্ষে সাহায্যকারী হয়।

যে পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে আপনাকে যেতে হয়েছে তার কি মানে এবং আপনি কিভাবে সেটা বুঝতে পারেন, সেটা নিয়ে কয়েকটা মিনিট চিন্তা করুন। আপনার ধারনাগুলি লিখে রাখার চেষ্টা করুন। যেমন

  • অন্যান্য লোকেদের সঙ্গে এই সম্বন্ধে কথাবার্তা বলা, যাতে ঘটনা সম্বন্ধে আরও বেশী জানা যায়।
  • অন্যান্য লোকেদের সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা করা।
  • কিছু কিছু হয়ত আপনি নিজেই করতে পারেন, যেমন; আপনার অভিজ্ঞতাগুলিকে লিখে রাখা।

২. এই ঘটনার দৃশ্যগুলি এবং দুঃস্বপ্নগুলিকে সামলানো

বহু ব্যক্তিরাই যাদের জীবনে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমা ঘটেছে, তারা এ সম্বন্ধে চিন্তা করতে চান না। তারা ভাবেন তারা যদি এ সম্বন্ধে না ভাবেন, তাহলে এটা চলে যাবে। যদিও মনে হয় যে এরকম করাই স্বাভাবিক, কিন্তু এটা সবসময় তাদের এই সমস্যা অতিক্রম করতে সাহায্য করে না। ভুক্তভোগীরা হয়ত দেখবেন যে তাদের মনের মধ্যে মর্মান্তিক ঘটনার বা ট্রমার ছবিগুলি এবং দুঃস্বপ্নগুলি সব সময় উঠতে থাকবে এবং এর ফলে তারা অশান্তিতে ভুগতে থাকবেন।

এই বেদনাদায়ক দৃশ্যগুলি এবং দুঃস্বপ্নকে বন্ধ করার একটা উপায় হল প্রত্যেক দিন একটু সময় করে খারাপ দৃশ্যগুলি এবং দুঃস্বপ্নগুলি ইচ্ছা করে মনে করা।

অনেকেই এটা লক্ষ্য করেছেন যে যদি তারা প্রত্যেকদিন ২০ মিনিট সময় এই ঘটনা বা ট্রমা এবং দুঃস্বপ্ন সম্বন্ধে চিন্তা করেন অথবা লিখে রাখেন, তাহলে আস্তে আস্তে এই বেদনাদায়ক দৃশ্য এবং দুঃস্বপ্ন দেখা কমে আসে। আপনি যদি দুঃস্বপ্ন দেখেন, তাহলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই চিন্তার ব্যপারে লিখে রাখলে উপকার পেতে পারেন।

এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনি আপনার চিন্তাধারাকে কিছুটা বশে আনতে পারবেন। না হলে এই চিন্তাগুলি হঠাত্ আপনার মনে উঠবে এবং আপনি সেই ব্যাপারে কিছুই করতে পারবেন না। যখন আপনি মর্মান্তিক দুঘটনা বা ট্রমার কথা চিন্তা করবেন, তখন এটা মনে রাখা উল্লেখযোগ্য যে সেই ঘটনার ভাল দিকগুলির দিকে মনোযোগ দেওয়া।

নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অবলম্বনের চেষ্টা করুন:

১. যে দৃশ্যগুলি আপনার মনে ভাসে বা যে দুঃস্বপ্নগুলি আপনি দেখেন, সেগুলি বিস্তারিত লিখে রাখুন।

২. প্রত্যেকদিন এমন একটা সময় ঠিক করুন যখন আপনি ঘটনাটি কি ভাবে ঘটেছিল, সে কথা চিন্তা করার সময় পাবেন। এই সময় পরিবেশটা যাতে শান্ত হয় সেই চেষ্টা করবেন।

৩. বর্তমান অবস্থার ভালদিকগুলি চিন্তা করুন। যেমন - “আমি মরে যাইনি, এখনও বেঁচে আছি”,

“আমার ভাল বন্ধু-বান্ধব আছে যারা আমাকে সাহায্য করছে”, “আমি এখন একটা নূতন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে পারব।”

৩. কঠিন চাপ, খিটখিটে মেজাজ এবং রাগ সামলানো

মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার পরে যে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়, তার ফলে কেউ স্বাভাবিক ভাবেই উত্তেজনা, খিটখিটে মেজাজ এবং রাগ প্রভৃতিতে ভুগতে পারেন। এমন কি এর ফলে শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এই প্রতিক্রিয়াগুলির ভিতর থাকতে পারে নিঃশ্বাসের কষ্ট, বুকের ভিতর ধক ধক করা, জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়া, মাথা ঘোরা এবং পেশীতে ব্যথা। নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করে এই শারীরিক প্রতিক্রিয়াগুলি কমাবার চেষ্টা করুন।

যখন আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার শারীরিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে. তখন এর তীব্রতা কমানোর জন্য প্রথম থেকেই ব্যবস্থা নিতে পারেন। যখনই প্রথম উত্তেজনা বা টেনশন দেখা দেবে তখনই এই ব্যবস্থা নেওয়া আরম্ভ করুন।

যখনই আপনি বুঝতে পারবেন যে উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে এবং আপনি আশঙ্কিত হচ্ছেন, তখন আশঙ্কার তীব্রতা যাতে না বাড়তে পারে তার জন্য শরীরকে শিথিল করার কলাকৌশল ব্যবহার করুন। বিভিন্ন ব্যক্তিরা. বিভিন্ন ভাবে শরীরকে শিথিল করে থাকেন। যেমন-ব্যায়ামের দ্বারা, গানবাজনা শুনে, টিভি দেখে অথবা বই পড়ে।

কারো পক্ষে হয়ত নানাধরনের ব্যায়াম করা সাহায্যকারী হতে পারে। অন্যদের পক্ষে হয়তঃ যোগ ব্যায়াম খুব উপকারী। কেউ কেউ হয়ত: টেপ শুনলে উপকার পান। আপনি আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে শরীর শিথিল করার টেপ পেতে পারেন। দোকানেও এই ধরনের অনেক টেপ কিনতে পাওয়া যায়।

শরীর শিথিল করা হচ্ছে একটা দক্ষতা, যেটা অন্য যে কোন দক্ষতার মতই শিখতে হয় এবং শিখবার জন্য সময় লাগে। নীচে একটা শরীর শিথিল করার উদাহরন দেওয়া হল, যেটা আপনার শরীর গভীরভাবে শিথিল করতে সাহায্য করবে এবং এটা অনেক লোককেই তাদের সব চাপা উত্তেজনা/টেনশন এবং উদ্বিগ্নতা কমাতে সাহায্য করে।

গভীরভাবে পেশীকে শিথিল করা - প্রথমে এর নির্দেশাবলীটি পড়লে সাহায্যকারী হবে। আস্তে আস্তে এই নির্দেশাবলী সম্পূর্ন শিখতে পারলে উপকারী হবে। একটা নির্জন, আরামদায়ক জায়গা বেছে নিন। এমন জায়গা বাছবেন যেখানে আপনাকে কেউ বিরক্ত করবে না। দিনের এমন একটা সময় বেছে নিন যখন আপনি ব্যস্ত নন এবং কোন ব্যাপারে তাড়াহুরা করতে হবে না। আরামদায়ক অবস্থায় শোন এবং চোখ বন্ধ করুন। কয়েক মিনিটের জন্য আপনার শ্বাস প্রশ্বাসের প্রতি মনোযোগ দিন। ধীরে ধীরে এবং শান্তভাবে শ্বাস নিন; শ্বাস নিয়ে এক দুই তিন গুনুন, শ্বাস ছেড়ে দিয়ে এক দুই তিন গুনুন। শ্বাস ছাড়ার সময় তখন “শান্ত” অথবা “বিশ্রাম” কথাটি আপনি নিজেকে বলুন। শরীর শিথিল করার ব্যায়াম আপনাকে বিভিন্ন পেশীর কথা বলবে। প্রথমে আপনার পেশীগুলিকে শক্ত করতে এবং পরে শিথিল করতে বলবে। আপনি যখন পেশীগুলিকে শিথিল করবেন তখন শ্বাস ছাড়বেন। প্রথমে হাতে আরম্ভ করুন। একটা হাতের মুটি শক্ত করুন। শক্ত মুটি আপনার পুরা হাতকে কিভাবে শক্ত করে তুলছে সেটা বোধ করুন।

কয়েক সেকেন্ড আপনার হাতের পেশী কি রকম শক্ত হয়েছে সেটা বোধ করুন এবং তারপর হাতকে শিথিল করুন। হাতের পেশী শক্ত এবং শিথিল হওয়ার মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করুন। আপনার হাত হয়ত একটু ঝিনঝিন করবে। এর মানে হল যে হাত শিথিল হতে আরম্ভ করেছে।

অন্য হাতটাও ঠিক একই ভাবে করুন।

প্রতিবার যখন আপনার শরীরে এক জায়গার পেশীগুলি শিথিল হয়, তখন চিন্তা করে দেখুন তখন কি রকম বোধ হয়। জোর করে পেশিকে শিথিল করবার চেষ্টা করবেন না। কেবল পেশির চাপা উত্তেজনা বা টেনশনকে আস্তে আস্তে ছেড়ে দেন। পেশীগুলিকে যতটা সম্ভব শিথিল হতে দিন। শক্ত পেশি এবং শিথিল পেশীর মধ্যে তফাত্টা লক্ষ্য করুন’। এখন আস্তে আস্তে শরীরের অন্য পেশীগুলির ক্ষেত্রেও এরকম করুন। প্রত্যেকবার কয়েক সেকেন্ডের জন্য পেশিগুলিকে শক্ত করুন এবং তারপর শিথিল করুন। লক্ষ্য করে দেখুন আপনি কি রকম বোধ করেন।

বিভিন্ন পেশীর উপর ঠিক একরকম ভাবে ব্যায়াম করলে এটা উপকারী হবে।

  • হাত - প্রথমে মুঠি করুন এবং তারপর শিথিল করুন।
  • বাহু -কনুই ভাজ করে পেশীগুলিকে শক্ত করুন। এই শক্ত ভাবটা লক্ষ্য

করুন, বিশেষত: হাতের উপরের দিকে। কয়েক সেকেন্ড হাতটাকে শক্ত করে রাখুন

এবং তারপর শিথিল করুন।

  • ঘাড় - মাথাকে পেছনের দিকে চাপুন বা ঠেলুন, তারপর মাথাকে আস্তে আস্তে একদিক

থেকে আর দিকে ঘোরান। লক্ষ্য করুন কিভাবে পেশীর শক্ত ভাবটা একদিকে থেকে

আরেক দিকে যাচ্ছে। এর পর আপনার মাথা সামনের দিকে ঝুকিয়ে আরাম করুন

  • মুখ - মুখে অনেকগুলি পেশী আছে, তবে আপনার পক্ষে কপাল এবং থুতনির পেশীর কথা ভাবলেই যথেষ্ট। প্রথমে আপনার ভুরু সামনের দিকে কুচকে ভ্রুকুটি করুন। এর পর কপাল শিথিল করুন। আপনি ভুরু উপরের দিকে তুলেও কপাল শিথিল করতে পারেন। এবার থুতনির পেশিগুলিকে শিথিল করুন এবং তফাত্টা লক্ষ্য করুন।
  • বুক - বুক ভরে শ্বাস নিন, কয়েক সেকেন্ডের জন্য শ্বাসটা ধরে রাখুন। বুকটা কি রকম শক্ত হয় সেটা লক্ষ্য করুন এরপর শ্বাস ছেড়ে দিন এবং বুককে শিথিল করুন।
  • পেট - পেটের পেশীগুলিকে যতটা সম্ভব পারেন শক্ত করুন এবং তারপর শিথিল করুন।
  • পাছা - দুইটি পাছা একসঙ্গে করে পেশীগুলিকে শক্ত করুন এবং তারপর শিথিল করুন
  • পা - পা সোজা করুন এবং পায়ের পাতাগুলিকে মুখের দিকে ঝোঁকান। এর পর পায়ের আঙ্গুলগুলিকে নাড়িয়ে পায়ের পেশিগুলিকে শিথিল করুন।

আপনার একজন বন্ধু যদি আপনাকে এই নির্দেশগুলি দেয়, তাহলে সেটা সাহায্যকারী হবে। জোর করবেন না। স্বাভাবিকভাবে যতটা করতে পারবেন, সেটা করুন।

এই পেশি শিথিল করার পন্থাগুলি ভালভাবে যাতে ব্যবহার করতে পারেন সেইজন্য নিম্নলিখিতগুলি করা প্রয়োজন।

  • এই অভ্যাসগুলি প্রত্যেকদিন করুন।
  • যখনই যে অবস্থায় পারবেন এই পেশি শিথিল করার চেষ্টা করতে আরম্ভ করুন।
  • পেশী শক্ত না করেও যাতে শরীর শিথিল করতে পারেন, তার চেষ্টা করুন।
  • কোন কঠিন অবস্থায় পড়লে এই শিথিল করার পদ্ধতি ব্যবহার করুন, যেমন আস্তে আস্তে শ্বাস প্রশ্বাস নিন।
  • জীবনযাত্রা যাতে সহজ করতে পারেন তার চেষ্টা করুন।

আপনার জিপি/ডাক্তারের কাছ থেকে এই শিথিল করা বা রিলাক্সেশনের টেপ পাওয়া যায়।

মনে রাখবেন, শরীর শিথিল করাও হচ্ছে একটা দক্ষতা যেটা শিখতে সময় লাগে। এই শিথিল বা রিলাক্সেশনের আগে আপনি কতটা চিন্তিত ছিলেন এবং পরে কতটা চিন্তিত আছেন সেটা লিখুন এবং সেই অবস্থাকে ১-১০ এর মধ্যে নম্বর দিন।

শ্বাস প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রন

কেউ যখন কোন কারনে, উদ্বিগ্ন বোধ করেন, রাগ করেন বা তাদের মেজাজ খিটখিট করে, তখন সাধারনত: শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়। তার মানে হল যে শ্বাস প্রশ্বাসের পরিবর্তন হয়। অনেকটা বাতাস তাদের মুখের ভিতর ঢুকে যেতে পারে এবং তাদের মনে হতে পারে যে তাদের দম বন্ধ হয়ে যাবে অথবা খুব জোরে জোরে এবং তাড়াতাড়ি শ্বাস নিতে থাকেন। এর ফলে তাদের মাথা ঘুরতে পারে এবং তারা আরও বেশী করে উদ্বিগ্ন বোধ করতে পারেন।

ভেবে দেখুন আপনার এরকম হয় কিনা। যদি হয় তাহলে শ্বাস প্রশ্বাস আস্তে আস্তে নিন। নিয়মিত ভাবে শ্বাস নিন এক দুই-তিন। নিয়মিতভাবে শ্বাস ছাড়ুন এক দুই তিন, এভাবে খুব তাড়াতাড়িই শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কেউ কেউ, তাদের শ্বাস প্রশ্বাসের সময়ের হিসাব রাখার জন্য ঘড়ির সেকেন্ডের কাটার দিকে লক্ষ্য রাখেন। অন্য লোকেরা একটা কাগজের ব্যাগে অথবা হাত জোড়া করে তার ভিতর শ্বাস প্রশ্বাস দেওয়া নেওয়া করতে ভালবাসেন। এইভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিলে আপনাকে কাগজের ব্যাগ দিয়ে অথবা হাত জোড় করে আপনার নাক এবং মুখ দুইটাই ঢাকতে হবে।

আস্তে আস্তে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া অথবা ব্যাগের ভিতর নিশ্বাস নেওয়া, যেটাই হোক না কেন, নিশ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হতে অন্ততঃ তিন মিনিট সময় লাগবে।

মন অন্য দিকে সরানো

আপনি যদি আপনার মন থেকে লক্ষনগুলি থেকে অন্যদিকে সরিয়ে নিতে পারেন, তাহলে দেখবেন প্রায়শই এই লক্ষনগুলি চলে যায়। আপনার চারদিকে তাকান, সবকিছু ভালভাবে দেখুন। যেমন গাড়ীর নম্বর, লোকেরা কি রকম জুতা পড়েছে, কি ধরনের কথাবার্তা চারপাশে হচ্ছে। এভাবেও, লক্ষনগুলি কমতে আরম্ভ করার জন্য অন্ততঃ তিন মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।

এটা মনে রাখা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য যে যদিও শরীর মন শিথিল করার কৌশলগুলি, যেমন শ্বাস প্রশ্বাসের অভ্যাস এবং মন অন্যদিকে ঘোরানোর চর্চা আপনাকে, আপনার উদ্বিগ্নতা কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবুও উদ্বিগ্নতা আপনার পক্ষে ক্ষতিকর অথবা বিপদজনক নয়। এমন কি আমরা যদি কোন রকম কলাকৌশল ব্যবহার নাও করি, তাহলেও খারাপ কিছু হবে না। উদ্বিগ্নতা কোন রকমের বিশেষ ক্ষতি করতে পারে না, তবে এই অভিজ্ঞতা একেবারেই আরামদায়ক নয়। এই কলাকৌশলগুলি ব্যবহার করলে এই অস্বত্তিকর অনুভূতিগুলি কমে যেতে পারে।

রাগ

আপনার ভিতরে যে রাগ আছে, সেই অনুভুতিগুলি নিয়ে আপনার ঘনিষ্ঠ লোকেদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করলে উপকারী হতে পারে। আপনার যদিও তাদের উপর রাগ নেই, কিন্তু কখনও কখনও আপনি হয়ত তাদের উপর রাগ ঝাড়েন। তাদেরকে এটা বুঝিয়ে বলুন যে তাদের উপর রাগ আপনার নেই, আপনার রাগের কারন হল যে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটা। তাদেরকে অনুরোধ করুন যে তারা যেন, আপনার রাগ এবং খিটখিটে মেজাজ কমে না যাওয়া পর্যন্ত আপনার সঙ্গে ধৈর্য্য ধরে থাকেন।

৪. এড়ানোর চেষ্টা না করা

একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার পর অন্য লোকদের নানাভাবে এড়ানো যেতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে এই ঘটনা সম্বন্ধে কথা বলা এড়ানো, এই ঘটনার কথা শুনলে খারাপ লাগবে সেইজন্য, এটা এমনও হতে পারে যে কোন কিছু, কোন ব্যক্তি বা কোন অবস্থা আপনাকে এই ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিতে পারে, সেইজন্য তাদের এড়িয়ে চলা। এই এড়ানোর ফলে ব্যাপারটা এমন হয় যে আপনি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার কষ্ট সেটা কাটিয়ে উঠতে পারেন না এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এর ফলে আপনার স্বাভাবিকভাবে জীবনযাত্রা চালানোও কঠিন হয়ে পড়ে।

বুঝতে চেষ্টা করুন যে আপনি কি কি এড়াতে চাইছেন। যেগুলি এড়াতে চাইছেন, সেগুলি যদি লিখে রাখেন, তাহলে সেটা হয়ত সাহায্যকারী হতে পারে।

এই ভয় দূর করার জন্য ছোটখাট পদক্ষেপ নিন। আমরা এটাকে বলি উদ্বিগ্নতার মই। যে অবস্থাগুলিকে আমরা অল্প সল্প ভয় পাই সেগুলি হচ্ছে মইয়ের নীচের দিকের ধাপগুলি এবং যে অবস্থাগুলিতে আমরা বেশী ভয় পাই সেগুলি হচ্ছে মইয়ের উপরের দিকের ধাপগুলি।

নীচের নমুনাগুলি দেখুন। সেগুলি হয়ত সাহায্যকারী হতে পারে।

মেরী যখন ব্যাঙ্কের কাউন্টারে কাজ করত তখন একদিন তাকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। সে এখন আর কোন ছোট অফিসে যেখানে অনেক লোকজনের যাতায়ত আছে সেখানে যেতে পারে না। টেলিভিশন বা খবরের কাগজে যেখানে হয়ত কোন ভয়ঙ্কর ঘটনার খবর আছে, সেইগুলি মেরী এড়িয়ে চলে। মেরী নীচের ‘উদ্বিগ্নতার মইটি’ লিখেছে।

সবচাইতে কম ভয় পায়;

১ আক্রমনের ঘটনার রিপোর্ট খবরের কাগজে দেখা

২ টেলিভিশনে সন্ধ্যা ছয়টার খবর দেখা

৩ ক্রাইম ওয়াচ প্রোগ্রাম দেখা

৪ স্থানীয় বিল্ডিং সোসাইটির সামনে গিয়ে দাঁড়ানো

৫ স্থানীয় বিল্ডিং সোসাইটিতে ঢোকা

৬ কর্মব্যস্থ এলাকায় ব্যাঙ্কের ভেতরে যাওয়া

৭ যে ব্যাঙ্কের ভিতর তাকে আক্রমন করা হয়েছিল সেই ব্যাংকের ভিতরে যাওয়া

বেশী ভয় পায়:

মেরী ১ নম্বর ধাপ থেকে এই ভয় দূর করা আরম্ভ করবে এবং আস্তে আস্তে ৭ নম্বর ধাপের দিকে এগিয়ে যাবে। যখন এটা করবে তখন মেরী দেখবে যে প্রত্যেক ধাপের সমঝোতা করার পরে তার সেই ধাপ আর এড়াতে হবে না।

মনে রাখবেন যে প্রত্যেক ধাপের সমঝোতা করার সময় প্রথমে আপনি হয়ত উদ্বিগ্ন বোধ করবেন। তবে যে অবস্থাটাকে আপনি ভয় পাচ্ছেন, সেই অবস্থাটাকে যদি জোর করে সমঝোতা করতে পারেন, তাহলে সেই ভয়টা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

৫. মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্র্যমার পর মন খারাপ এড়ানো

মর্মান্তিক ঘটনা বা ট্রমার পর লোকেরা হামেশাই মন খারাপে ভোগেন। এর ফলে প্রায়শই নিজেকে মূল্যহীন বলে মনে হয়, আত্মবিশ্বাস কমে যায়। নিজেকে অক্ষম এবং অপরাধী বলে মনে হয়।

এটা উল্লেখযোগ্য যে, যে কোন হতাশামূলক বা নেতিবাচক চিন্তা যেন আপনাকে আচ্ছন্ন না করে। আপনার মনের ভিতর সেই চিন্তাগুলি যাতে না ওঠে তার চেষ্টা করবেন। মর্মান্তিক ঘটনা বা ট্রমার পর লোকে নিজেদের সম্বন্ধে, তাদের ভবিষ্যত্ সম্বন্ধে এবং তাদের জীবন সম্বন্ধে ভাল কিছু ভাবতে পারে না, কেবল খারাপটাই ভাবে। এই চিন্তাগুলি কখনও মনে আসতে দেবেন না। নীচেরগুলি চেষ্টা করে দেখুন;

  • কখন এবং কেন আপনার মন খারাপ হয় সেটা বুঝতে চেষ্টা করুন।
  • সেই সময় যে ধরনের চিন্তাধারা আপনার মনে আসবে সেগুলি লিখে রাখুন।
  • যখন এই চিন্তাগুলি মনে জাগে তখন এই চিন্তার বিরুদ্ধে যুক্তিগুলি একটা কাগজে লিখে রাখুন। যদি আপনার কোন বন্ধু তাদের নিজেদের সম্বন্ধে এই ধরনের চিন্তা করে, তাহলে আপনি তাদের কি বলবেন সেটা ভাবুন। যদি আপনি নিজেকে দোষী মনে করেন তাহলে এই ভাবে চিন্তা করা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সারা সপ্তাহ ধরে আপনি কি কি উপভোগ করেছেন এবং কি কি ব্যাপারে সাফল্যলাভ করেছেন, সেগুলি ডাইরিতে লিখে রাখুন। এর ফলে আপনার জীবনের ভাল দিকগুলির দিকে মন দিতে এবং খারাপ দিকগুলিকে অবজ্ঞা করতে পারবেন।

কার্যকরী কিছু করুন

শারীরিক ব্যায়াম বিশেষভাবে উপকারি। হাঁটা, সাইকেল চালানো স্কিপিং করা এবং অন্যান্য যে কোন ব্যায়াম যেটা আপনার শারীরিক চলফেরা বাড়ায়, সেই সবগুলিই আপনাকে মানসিকভাবে ভাল বোধ করতে সাহায্য করবে। প্রথমদিকে প্রত্যেক দিন ১৫ থেকে ২০ মিনিটের ব্যায়াম করার পরিকল্পনা করুন। যদি প্রত্যেক দিন করা সম্ভব না হয় তাহলে একদিন পর পর করুন। এই ধরনের ব্যায়াম আসলে আপনার অবসাদ কমাতে সাহায্য করবে এবং আপনার মনকে ভাল করে তুলবে।

যে সকল জিনিষ আপনার করতে ভাল লাগে, প্রত্যেকদিন কিছু সময় সেগুলি করুন। যা কিছু করতে সাধারনত: আপনি ভালবাসেন এবং নিজের হাতে কিছু তৈরী করতে প্রত্যেকদিন কিছু সময় ব্যয় করুন। কোন নুতন কিছু করতে মনোযোগ দেওয়া সাহায্যকারী হতে পারে। যে সকল জিনিষ বা কাজকর্ম, যেগুলি তৈরী করার মাধ্যমে ব্যক্তিরা তাদের অনুভূতিগুলি ব্যক্ত করতে পারে, যেমন-ছবি আঁকা, কবিতা লেখা, গান বাজনা ইত্যাদি, তাদের ভাল বোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

নিজের প্রতি যত্ন নিন

আপনার যখন মন খারাপ হয় তখন সেটা এড়ানোর জন্য মদ, ড্রাগ বা বেশী করে ঔষধ খাওয়া আরম্ভ করবেন না। এইগুলি হয়ত সাময়িকভাবে আপনার মন ভাল করতে পারে, কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই এর ফলে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। খাওয়া দাওয়া ভাল করে করুন। স্বাস্থ্যসম্মত: খাবার খেলে আপনার শরীর ভাল থাকবে এবং এর ফলে আপনি তাড়াতাড়ি ভাল হবেন।

নিজের প্রতি ভাল ব্যবহার করুন এবং যে সকল জিনিস বা যা যা করতে ভালবাসেন সেগুলি উপভোগ করুন।

৬. কখন আমার আরও সাহায্য চাওয়া উচিত্?

আমরা আশা করি যে এই তথ্যপত্রে যে ধারনাগুলি দেওয়া হল সেগুলি আপনার পক্ষে সাহায্যকারী হবে। সাধারনত, মর্মান্তিক ঘটনা বা ট্রমার পর যে মানসিক চাপ, সময়ের সঙ্গে আস্তে আস্তে সেটা কমে যায়। তবে আপনার যদি মনে হয় আপনার ক্ষেত্রে সেরকম হচ্ছে না, তাহলে আরও অন্যান্য ধরনের সাহায্য আছে সেগুলি আপনার এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে। বিশেষত: যদি এই অবস্থা আপনার কর্মক্ষমতা বা অন্যান্য লোকেদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের উপর প্রভাব বিস্তার করে, আপনার যদি মনে হয় যে আপনি আর চারদিক সামলাতে পারছেন না অথবা নিজেকে আঘাত করবার চিন্তা আপনার মনে আসে তাহলে এই অন্যান্য সাহায্যগুলি আপনার পক্ষে বিশেষ ভাবে উপকারী। মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমার কয়েক মাস পরেও যদি আপনার অনুভূতিগুলির উন্নতি না হয় তাহলে অন্যান্য সাহায্যগুলির কথা বিবেচনা করা খুবই উপযোগী হবে।

৭. আমি কোথায় আরও সাহায্য পাব?

প্রথমে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা উচিত। তিনি হচ্ছেন এই ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার সবচাইতে যোগ্য ব্যক্তি। যে স্থানীয় সাহায্যকারী সংস্থাগুলি, গুলি আপনার পক্ষে উপকারী হতে পারে সেগুলি সম্বন্ধে খবর তার কাছে পাবেন। আপনার প্রাকটিস্ নার্স অথবা হেলথ্ ভিজিটারও আপনাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন।

যে সকল ব্যক্তিরা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ট্রমায় ভুগছেন ভিকঠিম সাপোর্ট তাদের সাহায্য এবং বাস্তবিক সহায়তা প্রদান করে থাকে।

ভিকঠিম সাপোর্ট লাইন: ০৮৪৫ ৩০৩০৯০০

[email protected]

নিম্নলিখিত সংস্থা এবং সাহায্যেকারী লাইনগুলি থেকে উপকার পেতে পারেন:

  • ক্রুস বিরিভমেন্ট লাইন - শোকগ্রস্থ ব্যক্তিদের এবং অন্যান্য যে সকল ব্যক্তিরা শোকগ্রস্থ ব্যক্তিদের দেখাশোনা করছেন তাদের জন্য সাহায্যের লাইন। টেলিফোন: ০৮৭০ ১৬৭১৬৭৭।
  • ডিসেবিলিটি - ডায়াল - এটা হচ্ছে অক্ষম বা বিকলাঙ্গ ব্যক্তিদের উপদেশ দেওয়ার এবং তথ্য সরবরাহ করার একটা সংস্থা। যে সকল ব্যক্তিদের অক্ষমতা বা বিকলাঙ্গতার অভিজ্ঞতা আছে, তারাই এই সংস্থাটিকে চালান। টেলিফোন: ০১৩০২-৩১০১২৩।
  • ডমেস্টিক ভায়োলেন্স - রেফিউজ - যে সকল মহিলারা পারিবারিক হিংস্রতার শিকার হয়েছেন, তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার জন্য বাস্তবিক উপদেশ এবং মানসিক সাহায্য দিয়ে থাকে। টেলিফোন: ০৮৭০ ৫৯৯ ৫৪৪৩।
  • ক্লেইম লাইন ডাইরেক্ট - এটা হল যে সকল ব্যক্তিরা যাদের একসিডেন্ট হয়েছিল এবং আঘাত লেগেছিল, তাদের জন্য। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে উকিল/সলিসিটারের কাছে সুপারিশ করার ব্যবস্থ্যা আছে। বিনা পয়সার টেলিফোন: ০৮৭০০ ৬৬৭৫৪৫।
  • মাইন্ড ইনফরমেশন লাইন: ০৮৪৫৭ ৬৬০১৬৩।
  • এন এইচ এস ডাইরেক্ট - টেলিফোনে সাহায্যের লাইন এবং তথ্য। একজন নার্সের সঙ্গে গোপনে কথা বলুন। টেলিফোন: ০৮ ৪৫ ৪৬ ৪৭ (স্থানীয় ফোনের দাম/লোকাল রেট )।
  • রেপ এন্ড সেক্সুয়াল এবিউজ। রেপ ক্রাইসিস সেন্টার - যে সকল মহিলাদের অথবা অল্পবয়সী মেয়েদের উপর রেপ অথবা যৌন অত্যাচার করা হয়েছে তাদর জন্য সাহায্যের লাইন। টেলিফোন: ০২০ ৭৮৩৭ ১৬০০।
  • রিলেট - বৈবাহিক অথবা স্বামী/স্ত্রী/সঙ্গীর মধ্যে সম্পর্কের সমস্যার ব্যপারে সাহায্য। টেলিফোন: ০৮৪৫ ১৩০৪০১০ (স্থানীয় ফোনের দাম/লোকাল রেট)।
  • সামারিটানস - যে কেউ যিনি বিপদে পড়েছেন তার জন্য গোপন সাহায্য। টেলিফোন: ০৮৪৫৭ ৯০৯০৯০।

৮. কয়েকটি সহায়তামূলক বই যেগুলি আপনি ইচ্ছা করলে কিনতে পারেন অথবা লাইব্রেরী থেকে ধার করতে পারেন

  • হারবার্ট সি ওয়েটমোর, এ (১৯৯৭) ওভারকামিং ট্রমাটিক স্ট্রেস। রবিনসন লন্ডন
  • ডেভিড বার্নস (১৯৮০)। ফিলিং গুড, দি নিউ মুড থেরাপি। নিউ এমেরিকান লাইব্রেরী। নিউ ইওর্ক।
  • গিলবার্ট পল (১৯৯৭) ওভারকামিং ডিপ্রেশন। রবিনসন লন্ডন
  • হজ্‌কিনসন, পি. ই এন্ড স্টুয়ার্ড, এম (১৯৯১)। কোপিং উইথ ক্যাটাস্ট্রফি। রাউটলেজ
  • কিনচিন, ডি (১৯৯৪)। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার - কঠিন দুর্ঘটনা বা ট্রমা থেকে ভাল হওয়ার একটি বাস্তবমূলক নির্দেশিকা। থরসন্স।
  • মাটসাকিস,এ (১৯৯২)। আই কান্ট গেট ওভার ইট - কঠিন ঘটনা বা ট্রমা থেকে যারা বেচেছেন তাদের জন্য একটা নির্দেশিকা। হারবিংগার।
  • পারকিনসন, এফ (১৯৯৩)। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস।

এই তথ্যপত্রের জন্য সাহায্যমূলক মন্তব্য এবং পরামর্শ দেওয়ার জন্য নর্থহ্যামবারল্যান্ড ভিকটিম সাপোর্র সংস্থাকে অনেক ধন্যবাদ।

This document was provided by Newcastle, North Tyneside and Northumberland Mental Health NHS Trust. www.nnt.nhs.uk/mh.